বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। দীর্ঘদিন যাবত পরিবেশ বিষয়ক এই সমস্যা বিদ্যমান থাকলেও, এর প্রতিকার হিসেবে গৃহীত হয়নি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ।
ফলে দিনকে দিন বায়ুদূষণের প্রভাবে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ঝুঁকির মধ্যে পতিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাংক ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ছয় হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা) বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে।
বায়ু পরিবেশের অন্যতম উপাদান। এই বায়ু দূষণ হলে পরিবেশেও দুষিত হয়ে যায়। আবার পরিবেশ দূষিত হলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে চতুর্থ প্রধান কারণ এখন বায়ুদূষণ। এমনকি প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বায়ুদূষণের প্রভাবে, এরমধ্যে শিশুমৃত্যুর হার সর্ব্বোচ। আন্তর্জাতিক পরিবেশবিষয়ক সংস্থা গ্রিন পিস এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বায়ুদূষণের কারণে। অন্যদিকে, বায়ুদূষণজনিত রোগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৯৬ হাজার শিশুর অকালমৃত্যু হয়েছে। এমনকি বছরে ৪০ লাখ মানুষ অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছে চিকিৎসা নিতে।
অনিয়ন্ত্রিতভাবে জীবাশ্ম জ্বালানী (ফসিল ফুয়েল) ব্যবহার, ভারী কারখানা, ইটের ভাটা, রাসায়নিক প্ল্যান্ট বৃদ্ধির ফলে দ্রুতই দেশের বায়ু দূষিত হচ্ছে। এভাবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, অর্থনৈতিক ক্ষতি বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হবে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত প্রকল্প যথাসম্ভব বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরী। যদিও এই প্রকল্পের আওতায় কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে বৃহৎ পরিসরে এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন যেন সামগ্রিকভাবে মানুষ এই দূষণ রোধে ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে, দেশের কোন অঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা কোন পর্যায়ে তা নির্ণয়ের পাশাপাশি দূষণের কারন সমূহ চিহ্নিত করে দূষণ হ্রাসে পরিকল্পনা গ্রহণ করা কাম্য। সর্বশেষ এই বৃহৎ প্রকল্পটি যথাসময়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।