মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নৃশংসভাবে হত্যা করে গণকবর দেয়। প্রতিটি গণকবরকেই বলা হয় একেকটি বধ্যভূমি।
‘গল্লামারী স্বাধীনতা
স্মৃতিসৌধ’ এরকমই একটি বধ্যভূমি। খুলনা শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
সংলগ্ন গল্লামারী বাজারের পাশেই অবস্থিত এটি খুলনা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি হিসেবে
পরিচিত।
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী
সময়ে আশেপাশের লোকজন ঐ এলাকায় (বর্তমানে স্মৃতিসৌধটি যেখানে) যেতে ভয় পেত। জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের পর গল্লামারী
খাল এবং এর আশেপাশের স্থান থেকে প্রায় পাঁচ ট্রাক ভর্তি মানুষের মাথার খুলি এবং হাড়গোড়
পাওয়া যায়।
তৎকালীন পূর্ব
পাকিস্তান রেডিও স্টেশন (গল্লামারী রেডিও সেন্টার) ছিল বর্তমান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের
মধ্যে। সেখানেই আস্তানা গড়ে তোলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধে খুলনা
শহর থেকে, এমনকি খুলনার আশেপাশের অনেক এলাকা থেকে অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষকে এখানে এনে নির্মমভাবে
হত্যা করে গণকবর দেওয়া হতো। স্বাধীনতা যুদ্ধে মহান শহীদদের আত্মত্যাগের এই সৃতিকে ধরে
রাখার জন্যে, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নেয় এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের
এবং ছোট পরিসরে নির্মাণ করা হয় ‘গল্লামারী স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ’। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে
জেলা পরিষধ উদ্যোগ নেয়, একটি আধুনিক স্মৃতিসৌধ নির্মাণের এবং ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর
শুরু হয় নির্মাণ কাজের। সর্বশেষ, ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর, তৎকালীন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের
মাননীয় মেয়র জনাব আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক শুভ উদ্বোধন করেন ‘খুলনা গল্লামারী
স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের'।
শুকনো মৌসুমে এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থী আসলেও, বর্ষাকালে দেখা যায়না তেমন কাউকে। একটু বেশী বৃষ্টি হলে স্মৃতিসৌধটির সামনের জায়গাটিতে জমে থাকে পানি। বিকেলে ঘুরতে আসা তাঞ্জিল হাসান (২২) বলেন, “এখানে প্রায় ঘুরতে আসা হয়। জায়গাটি জন-জাট মুক্ত নিরিবিল। অনেক ঘাস আছে। ঘাসের উপর বসা যায়। তাছাড়া খোলামেলা জায়গা, অনেক বাতাসও আছে। সব মিলে ভালোলাগার মতো। তবে বৃষ্টি হলে কাদা হয়ে যায় তাই আসা হয়না”।